টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে টেনে-হিঁচড়ে বাইরে বের করে আনছে সেই স্কুলের কোন ছাত্রী বা অভিভাবক; এরকম একটি ছবি অক্টোবরের ২ তারিখ দেশের বিভিন্ন জাতীয় প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। শিক্ষক সমাজের জন্য এই দৃশ্য সত্যিই অপমানজনক। তবে ইদানিং এরকম কোন দৃশ্য নতুন নয়। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় তার সন্তানর সমতূল্য ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি ছাত্রীরা সহ্য করে এসেছে। হয়তো শিক্ষক বলেই ভয়ে বা লজ্জায় বিষয়টি সামনে আসেনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নোংরামিটা সামনে এসেছে। প্রতিনিয়তই দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এরকম বা এর থেকেও কুৎসিত কোন ঘটনা ঘটছে। এই ঘটনাটি এমন সময়ে ঘটলো যখন তার দুই দিন পরেই শিক্ষক দিবস।
শিক্ষকতা কতটা মহান যে তাদের কর্মকান্ড শ্রদ্ধায় স্মরণ করার জন্য আলাদা একটি দিন রয়েছে। কিন্ত কতিপয় নৈতিক অধঃপতনে যাওয়া কিছু শিক্ষক নামের মানুষের জন্য পুরো শিক্ষক সমাজকেই কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে।
শিক্ষকতা কোন পেশা নয় বরং এটি একটি ব্রত। এটিই শিক্ষকতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা। তবে বাস্তবে এটিকে পেশা হিসেবেই গ্রহণ করা হয়। তবে আর দশটা পেশা থেকে এর দায়িত্ব ও উদ্দেশ্য ভিন্ন। একজন শিক্ষক কেমন হবেন? এসব বিষয় নিয়ে প্রচুর গবেষণা হয়েছে। সেসব গবেষণা থেকে বেরিয়ে এসেছে একজন শিক্ষকের দায়িত্ব ও গুণাবলী। খুব সাধারণভাবে বোঝালে যিনি একদিনের জন্যও কোন বিষয়ের শিক্ষা দান করেছেন তিনিই শিক্ষক। শিক্ষক, শিক্ষা ও শিক্ষার্থী শব্দগুলো পরস্পর নির্ভরশীল ও একে অপরের সাথে ঘনিষ্টভাবে সম্পর্কযুক্ত। শিক্ষকবিহীন শিক্ষা যেমন কল্পনা করা যায় না, তেমনি শিক্ষার্থীবিহীন শিক্ষাও অর্থহীন। শিক্ষক তার কাছে আসা শিক্ষার্থীদের জীবনে বেঁচে থাকার, জীবন যুদ্ধে জয়ী হবার মন্ত্র শিখিয়ে দেন। তিনি শিক্ষার্থীদের মনের আবেগ নিয়ন্ত্রণের দীক্ষা দেন। তিনি চান যেন তার শিক্ষার্থী জীবনের সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে বিজয়ী হোক। আবার একজন শিক্ষককে বলা হয় আজীবন ছাত্র। জ্ঞান অšে¦ষণনে তার তৃষ্ণা অপরিসীম। নিজে না শিখলে অন্যকে কী শেখাবেন। তাই তো তাকে পড়তে হয়, জানতে হয় এবং জানাতে হয়। এই জানানোর কাজটি হচ্ছে শিক্ষকতার জীবনের সবথেকে পরিশ্রমী এবং কঠিন কাজ। কারণ তার জানানোর কাজটি সফল হয়েছে কি না তা বুঝতে পারাও একটি বড় দক্ষতার ব্যাপার।
একজন শিক্ষক হচ্ছেন সেই ব্যাক্তি যার মধ্যে পরামর্শক হওয়ার, শিক্ষা সহায়ক ব্যাক্তি, শিক্ষক নিজেই শিক্ষা সহায়ক সামগ্রীর উন্নয়ন সাধন করবেন, তার আচরণ হবে রোল মডেল, তিনি সমাজের দর্পণ, কারিকুলাম প্রস্তুতকারক ও মূল্যায়ণকারণ, শিক্ষা সংগঠক এবং নির্দেশক ইত্যাদি গুণাবলী স¤পূর্ণ মানুষ। সত্যি কথা বলতে একদিক থেকে শিক্ষক একজন সত্যিকারের অতিমানব যাদের থাকে সহজেই আকৃষ্ট করার ক্ষমতা। আবার একদিক থেকে শিক্ষকরা খুব সাধারণ একজন মানুষ যারা তৈরি করেন অসাধারণ সব মানুষ। শিক্ষা কোন পেশা নয় বরং একটি সেবা। সমাজে অনেক সেবামূলক কাজ রয়েছে। এর মধ্য শিক্ষা অন্যতম। শিক্ষা হচ্ছে একটি ব্রত। যে ব্রত দিয়ে তিনি তার ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটান। শিক্ষকের এই কাজটির সফলতা ও ব্যার্থতার মধ্যে রয়েছে দেশ ও জাতির ভবিষ্যত।
বাস্তবে বিভিন্ন কারণে আমাদের দেশের শিক্ষক সমাজ আজ প্রশ্নের সম্মুখীন। কারণ পাস করা সার্টিফিকেটের জোরে যে কেউ শিক্ষকতা পেশায় ঢুকে পরছে কিন্তু সেই ব্যক্তি শিক্ষক হিসেবে কেমন তা যাচাই করার কোন উপায় নেই। একজন শিক্ষক অবশ্যই সৎ ও নৈতিক চরিত্রের অধিকারি হবেন। কিন্তু সার্টিফিকেট মেধার মূল্যায়ন করলেও মনুষ্যত্বের মূল্যায়ণের ক্ষমতা রাখে না। ফলে শিক্ষকতা পেশায় থেকেও নানা অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পরছে। এবং এজন্য শিক্ষক সমাজের প্রতি আঙুল উঠছে। তাছাড়া শিক্ষাকে পুঁজি তৈরির উপাদান হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেছে অনেকে।
বড় হওয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক শিক্ষকের সাহচার্যে এসেছি। তবে তাদের সবাই কিন্তু মনে ঠাঁই করে নেয়নি। কেউ কেউ আজও মনে দাগ কেটে রেখেছে। প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে বিশ^বিদ্যালয় পর্যন্ত কয়েকজন শিক্ষককেই আজও বারবার মনে পরে। সেসব শিক্ষকের আদর্শ নিয়ে এগিয়ে চলেছি। প্রকৃতপক্ষে পিতামাতার মত শিক্ষকের স্থানও তার সন্তানসম ছাত্রছাত্রীদের মাঝে। তার আদর্শই ভবিষ্যতে ছাত্রর মাঝে প্রভাবিত হয়।
শিক্ষক নিয়ে ছোটবেলাতে বাদশা আলমগীরের একটি কবিতা আমরা প্রায় সবাই পড়েছি। শিক্ষকের মর্যাদা দেবার উৎকৃষ্ট উদাহরণ এই কবিতাটি। একজন বাদশা হয়ে যিনি শিক্ষকের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল এবং শিক্ষকের প্রতি সন্তানের একটু অবহেলাও তিনি মেনে নিতে পারেননি। শিক্ষকের চিন্তাতেও যখন ঐ অবহেলার বিষয়টি ছিল না তখন বাদশা তাকে বিষয়টি বলেন। তার যে এবিষয়টাও যে সন্তানের শিক্ষার মধ্যে আনা উচিত ছিল তা বোঝানোর জন্যই তিনি শিক্ষককে ডেকেছিলেন। আর তাই বাদশা আলমগীরকে কবিতায় মহান বলে বর্ণনা করা হয়েছে। যিনি সত্যই বুঝেছিলেন শিক্ষকের মর্যাদা কেমন হওয়া উচিত।
বছরের পর বছর পাস করিয়ে রেজাল্ট ভাল করাতে পারলেই কিন্তু শিক্ষকের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। বরং দায়িত্ব তো প্রতিটি শিক্ষার্থীর মধ্যে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটানো। একজন শিক্ষকই যা আবিষ্কার করতে পারেন এবং তা ব্যাবহারে পথ দেখাতে পারেন। তবে বর্তমানে গুটিকয়েক শিক্ষকের কর্মকান্ডে প্রায়ই এ পেশা সমালোচিত হয়। কিন্তু গুটিকয়েক উদাহরণ থেকে সার্বিক মূল্যায়ন করাটা বোকামী। শুধু পেশায় নিয়োজিত হলেই শিক্ষক হওয়া যায় না। শিক্ষক হতে হলে তার সম্পর্কিত গুণাবলী অর্জন করতে হবে। শুধু পোশাকে বা পেশায় শিক্ষক হয়ে কি লাভ? বাবা মা যেমন সন্তানের বুকের ভেতর বেঁচে থাকে ঠিক তেমনি করেই শিক্ষক বেঁচে থাকেন তার শিক্ষার্থীর মধ্যে। আমার অনেক শিক্ষক যেমন আজও বেঁচে আছেন আমার মধ্যে।
শিক্ষক হিসেবে একজন মানুষ কখন সফল তা নির্ণয় করা তা চাকরির বয়সের উপর নির্ভর করে না। বরং সেই শিক্ষক কতজন শিক্ষার্থীর ভেতর নিজের আদর্শ প্রভাবিত করতে পারছেন, কতজনকে মানুষ হওয়ার সঠিক পথ দেখাতে পেরেছেন তার উপর নির্ভর করে। শিক্ষক বেঁচে থাকেন শিক্ষার্থীর মধ্যে। মানুষ হওয়ার সেই মন্ত্র একমাত্র শিক্ষকের ভেতরেই থাকে। একজন শিক্ষার্থী শিক্ষক সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করার সুযোগই পাওয়া উচিত না। কারণ যে প্রকৃত শিক্ষক সে কোনদিন কোন একজন শিক্ষার্থীর জীবনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এমন কিছু করেন না।
শিক্ষকতা পেশায় থাকলেই প্রকৃত শিক্ষক হওয়া যায় না। এটাও এক ধরনের প্রাণান্ত চেষ্টার ফল। কোন দেশের মেধাবী সন্তানরা বের হয় কোন শিক্ষকের হাত ধরে। শিক্ষকের আদর্শ, চেতনা, অনুপ্রেরণা, কর্মপদ্ধতি সবকিছু ছাত্রছাত্রীরা মাঝে প্রভাবিত হয়। শিক্ষা যদি সমাজের আয়না হয় শিক্ষক তবে সেই আয়নার প্রতিচ্ছবি। শিক্ষকের মাধ্যমেই শিক্ষার রস সমাজে ছড়িয়ে পরে। শিক্ষার রস আস্বাদন করার সুযোগ পায় শিক্ষকের জন্য। বর্তমান সময়ে শিক্ষকরা তাই অনেকটাই লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়েছে। কেবল পেশা হিসেবেই নেয়ার জন্য এই দশা। আর শিক্ষকতা ব্রত হিসেবে নেয়ার জন্য কেবল সার্টিফিকেটের মানদন্ডই যথেষ্ট নয়। সবথেকে কুৎসিত মানসিকতার মানুষেরও আজ বড় বড় সার্টিফিকেট রয়েছে। ভালো শিক্ষক হতে হলে সার্টিফিকেটের সাথে সাথে দরকার মানসিকতা। শিক্ষকতা পেশায় আসার আগে মনকে স্থির করতে হবে। কোন এক দু’জন শিক্ষকরুপী অমানুষের জন্য শিক্ষক সমাজের অসম্মান মেনে নেয়া যায় না। আর দশটা চাকরির যোগ্যতা আর শিক্ষকতার যোগ্যতা তাই এক মাপকাঠিতে বিচার করলে চলবে না।
শিক্ষকতা কতটা মহান যে তাদের কর্মকান্ড শ্রদ্ধায় স্মরণ করার জন্য আলাদা একটি দিন রয়েছে। কিন্ত কতিপয় নৈতিক অধঃপতনে যাওয়া কিছু শিক্ষক নামের মানুষের জন্য পুরো শিক্ষক সমাজকেই কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে।
শিক্ষকতা কোন পেশা নয় বরং এটি একটি ব্রত। এটিই শিক্ষকতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা। তবে বাস্তবে এটিকে পেশা হিসেবেই গ্রহণ করা হয়। তবে আর দশটা পেশা থেকে এর দায়িত্ব ও উদ্দেশ্য ভিন্ন। একজন শিক্ষক কেমন হবেন? এসব বিষয় নিয়ে প্রচুর গবেষণা হয়েছে। সেসব গবেষণা থেকে বেরিয়ে এসেছে একজন শিক্ষকের দায়িত্ব ও গুণাবলী। খুব সাধারণভাবে বোঝালে যিনি একদিনের জন্যও কোন বিষয়ের শিক্ষা দান করেছেন তিনিই শিক্ষক। শিক্ষক, শিক্ষা ও শিক্ষার্থী শব্দগুলো পরস্পর নির্ভরশীল ও একে অপরের সাথে ঘনিষ্টভাবে সম্পর্কযুক্ত। শিক্ষকবিহীন শিক্ষা যেমন কল্পনা করা যায় না, তেমনি শিক্ষার্থীবিহীন শিক্ষাও অর্থহীন। শিক্ষক তার কাছে আসা শিক্ষার্থীদের জীবনে বেঁচে থাকার, জীবন যুদ্ধে জয়ী হবার মন্ত্র শিখিয়ে দেন। তিনি শিক্ষার্থীদের মনের আবেগ নিয়ন্ত্রণের দীক্ষা দেন। তিনি চান যেন তার শিক্ষার্থী জীবনের সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে বিজয়ী হোক। আবার একজন শিক্ষককে বলা হয় আজীবন ছাত্র। জ্ঞান অšে¦ষণনে তার তৃষ্ণা অপরিসীম। নিজে না শিখলে অন্যকে কী শেখাবেন। তাই তো তাকে পড়তে হয়, জানতে হয় এবং জানাতে হয়। এই জানানোর কাজটি হচ্ছে শিক্ষকতার জীবনের সবথেকে পরিশ্রমী এবং কঠিন কাজ। কারণ তার জানানোর কাজটি সফল হয়েছে কি না তা বুঝতে পারাও একটি বড় দক্ষতার ব্যাপার।
একজন শিক্ষক হচ্ছেন সেই ব্যাক্তি যার মধ্যে পরামর্শক হওয়ার, শিক্ষা সহায়ক ব্যাক্তি, শিক্ষক নিজেই শিক্ষা সহায়ক সামগ্রীর উন্নয়ন সাধন করবেন, তার আচরণ হবে রোল মডেল, তিনি সমাজের দর্পণ, কারিকুলাম প্রস্তুতকারক ও মূল্যায়ণকারণ, শিক্ষা সংগঠক এবং নির্দেশক ইত্যাদি গুণাবলী স¤পূর্ণ মানুষ। সত্যি কথা বলতে একদিক থেকে শিক্ষক একজন সত্যিকারের অতিমানব যাদের থাকে সহজেই আকৃষ্ট করার ক্ষমতা। আবার একদিক থেকে শিক্ষকরা খুব সাধারণ একজন মানুষ যারা তৈরি করেন অসাধারণ সব মানুষ। শিক্ষা কোন পেশা নয় বরং একটি সেবা। সমাজে অনেক সেবামূলক কাজ রয়েছে। এর মধ্য শিক্ষা অন্যতম। শিক্ষা হচ্ছে একটি ব্রত। যে ব্রত দিয়ে তিনি তার ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটান। শিক্ষকের এই কাজটির সফলতা ও ব্যার্থতার মধ্যে রয়েছে দেশ ও জাতির ভবিষ্যত।
বাস্তবে বিভিন্ন কারণে আমাদের দেশের শিক্ষক সমাজ আজ প্রশ্নের সম্মুখীন। কারণ পাস করা সার্টিফিকেটের জোরে যে কেউ শিক্ষকতা পেশায় ঢুকে পরছে কিন্তু সেই ব্যক্তি শিক্ষক হিসেবে কেমন তা যাচাই করার কোন উপায় নেই। একজন শিক্ষক অবশ্যই সৎ ও নৈতিক চরিত্রের অধিকারি হবেন। কিন্তু সার্টিফিকেট মেধার মূল্যায়ন করলেও মনুষ্যত্বের মূল্যায়ণের ক্ষমতা রাখে না। ফলে শিক্ষকতা পেশায় থেকেও নানা অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পরছে। এবং এজন্য শিক্ষক সমাজের প্রতি আঙুল উঠছে। তাছাড়া শিক্ষাকে পুঁজি তৈরির উপাদান হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেছে অনেকে।
বড় হওয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক শিক্ষকের সাহচার্যে এসেছি। তবে তাদের সবাই কিন্তু মনে ঠাঁই করে নেয়নি। কেউ কেউ আজও মনে দাগ কেটে রেখেছে। প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে বিশ^বিদ্যালয় পর্যন্ত কয়েকজন শিক্ষককেই আজও বারবার মনে পরে। সেসব শিক্ষকের আদর্শ নিয়ে এগিয়ে চলেছি। প্রকৃতপক্ষে পিতামাতার মত শিক্ষকের স্থানও তার সন্তানসম ছাত্রছাত্রীদের মাঝে। তার আদর্শই ভবিষ্যতে ছাত্রর মাঝে প্রভাবিত হয়।
শিক্ষক নিয়ে ছোটবেলাতে বাদশা আলমগীরের একটি কবিতা আমরা প্রায় সবাই পড়েছি। শিক্ষকের মর্যাদা দেবার উৎকৃষ্ট উদাহরণ এই কবিতাটি। একজন বাদশা হয়ে যিনি শিক্ষকের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল এবং শিক্ষকের প্রতি সন্তানের একটু অবহেলাও তিনি মেনে নিতে পারেননি। শিক্ষকের চিন্তাতেও যখন ঐ অবহেলার বিষয়টি ছিল না তখন বাদশা তাকে বিষয়টি বলেন। তার যে এবিষয়টাও যে সন্তানের শিক্ষার মধ্যে আনা উচিত ছিল তা বোঝানোর জন্যই তিনি শিক্ষককে ডেকেছিলেন। আর তাই বাদশা আলমগীরকে কবিতায় মহান বলে বর্ণনা করা হয়েছে। যিনি সত্যই বুঝেছিলেন শিক্ষকের মর্যাদা কেমন হওয়া উচিত।
বছরের পর বছর পাস করিয়ে রেজাল্ট ভাল করাতে পারলেই কিন্তু শিক্ষকের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। বরং দায়িত্ব তো প্রতিটি শিক্ষার্থীর মধ্যে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটানো। একজন শিক্ষকই যা আবিষ্কার করতে পারেন এবং তা ব্যাবহারে পথ দেখাতে পারেন। তবে বর্তমানে গুটিকয়েক শিক্ষকের কর্মকান্ডে প্রায়ই এ পেশা সমালোচিত হয়। কিন্তু গুটিকয়েক উদাহরণ থেকে সার্বিক মূল্যায়ন করাটা বোকামী। শুধু পেশায় নিয়োজিত হলেই শিক্ষক হওয়া যায় না। শিক্ষক হতে হলে তার সম্পর্কিত গুণাবলী অর্জন করতে হবে। শুধু পোশাকে বা পেশায় শিক্ষক হয়ে কি লাভ? বাবা মা যেমন সন্তানের বুকের ভেতর বেঁচে থাকে ঠিক তেমনি করেই শিক্ষক বেঁচে থাকেন তার শিক্ষার্থীর মধ্যে। আমার অনেক শিক্ষক যেমন আজও বেঁচে আছেন আমার মধ্যে।
শিক্ষক হিসেবে একজন মানুষ কখন সফল তা নির্ণয় করা তা চাকরির বয়সের উপর নির্ভর করে না। বরং সেই শিক্ষক কতজন শিক্ষার্থীর ভেতর নিজের আদর্শ প্রভাবিত করতে পারছেন, কতজনকে মানুষ হওয়ার সঠিক পথ দেখাতে পেরেছেন তার উপর নির্ভর করে। শিক্ষক বেঁচে থাকেন শিক্ষার্থীর মধ্যে। মানুষ হওয়ার সেই মন্ত্র একমাত্র শিক্ষকের ভেতরেই থাকে। একজন শিক্ষার্থী শিক্ষক সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করার সুযোগই পাওয়া উচিত না। কারণ যে প্রকৃত শিক্ষক সে কোনদিন কোন একজন শিক্ষার্থীর জীবনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এমন কিছু করেন না।
শিক্ষকতা পেশায় থাকলেই প্রকৃত শিক্ষক হওয়া যায় না। এটাও এক ধরনের প্রাণান্ত চেষ্টার ফল। কোন দেশের মেধাবী সন্তানরা বের হয় কোন শিক্ষকের হাত ধরে। শিক্ষকের আদর্শ, চেতনা, অনুপ্রেরণা, কর্মপদ্ধতি সবকিছু ছাত্রছাত্রীরা মাঝে প্রভাবিত হয়। শিক্ষা যদি সমাজের আয়না হয় শিক্ষক তবে সেই আয়নার প্রতিচ্ছবি। শিক্ষকের মাধ্যমেই শিক্ষার রস সমাজে ছড়িয়ে পরে। শিক্ষার রস আস্বাদন করার সুযোগ পায় শিক্ষকের জন্য। বর্তমান সময়ে শিক্ষকরা তাই অনেকটাই লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়েছে। কেবল পেশা হিসেবেই নেয়ার জন্য এই দশা। আর শিক্ষকতা ব্রত হিসেবে নেয়ার জন্য কেবল সার্টিফিকেটের মানদন্ডই যথেষ্ট নয়। সবথেকে কুৎসিত মানসিকতার মানুষেরও আজ বড় বড় সার্টিফিকেট রয়েছে। ভালো শিক্ষক হতে হলে সার্টিফিকেটের সাথে সাথে দরকার মানসিকতা। শিক্ষকতা পেশায় আসার আগে মনকে স্থির করতে হবে। কোন এক দু’জন শিক্ষকরুপী অমানুষের জন্য শিক্ষক সমাজের অসম্মান মেনে নেয়া যায় না। আর দশটা চাকরির যোগ্যতা আর শিক্ষকতার যোগ্যতা তাই এক মাপকাঠিতে বিচার করলে চলবে না।
Post a Comment